হাজার হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিবছর বিদেশ সফরে যান। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিনোদনের প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশিদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

বৈধতা ঠিক রাখতে এসব বিদেশগামীর পাসপোর্ট  নবায়ন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। আমলাতান্ত্রিক ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে, বাংলাদেশি এমআরপি এবং হাতেলেখা পাসপোর্ট কীভাবে নবায়ন করা যায়, সে সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো:

বাংলাদেশে পাসপোর্টের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরনের পাসপোর্ট আছে- হাতে লেখা, মেশিন রিডেবল এবং ই-পাসপোর্ট।

সর্বশেষ হাতে লেখা পাসপোর্টটি ২০১০ সালে ইস্যু করা হয়েছিল এবং প্রতিটি পাসপোর্টের সর্বোচ্চ ১০ বছর বৈধতা থাকে। সেই বিবেচনায় হাতে লেখা পাসপোর্ট এই সময়ে আর চলবে না।

বর্তমানে পাসপোর্ট পাওয়া যায় এমআরপি বা ই-পাসপোর্ট হিসেবে। ২০২০ সাল থেকে রোলআউট ভিত্তিতে ই-পাসপোর্টগুলো উপলব্ধ করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের সব আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন ই-পাসপোর্ট পরিষেবা অফার করছে। ফলে হাতে লেখা বা এমআরপি পাসপোর্ট ধারণকারী যে কেউ সহজেই নিম্নলিখিত উপায়ে তাদের পাসপোর্ট ই-পাসপোর্ট হিসাবে পুনরায় ইস্যু করার জন্য আবেদন করতে পারেন।

এমআরপি ও হাতে লেখা পাসপোর্টকে ই-পাসপোর্ট করতে যেভাবে আবেদন করবেন

আপনাকে পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে (আপনার বর্তমান ঠিকানা অনুসারে) যেতে হবে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

অফিসিয়াল পাসপোর্ট সাইটে নিবন্ধন

প্রথম ধাপ হল অফিসিয়াল ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা। এখানে আবেদনকারীকে নির্বাচন করতে হবে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন কি না। এরপর বর্তমান ঠিকানার জেলা এবং নিকটতম থানা নির্বাচন করতে হবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে একটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পরামর্শ দেওয়া হবে।

ই-মেইল নিবন্ধন

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিশ্চিত করার পর আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইলসহ প্রাথমিক তথ্য পূরণ করতে হবে। একটি যাচাইকরণ ই-মেইল নির্বাচিত মেইল ​​ঠিকানায় পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাবে।

তথ্য পূরণ করা

ই-মেইল নিবন্ধনের পর ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তথ্য বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত।
প্রত্যেকটি ঘর সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। কারণ তথ্যের কোনো অসঙ্গতি হলে আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে। বোঝার সুবিধার জন্য প্রতিটি বিভাগ নিচে আলোচনা করা হয়েছে:

ব্যক্তিগত তথ্য

এই বিভাগটি বিশেষভাবে আবেদনকারীর ব্যক্তি তথ্য সম্পর্কিত। এখানে আবেদনকারীর নাম, বিআরসি বা এনআইডি নম্বরের মতো তথ্য দিতে হবে। এখানে সেই বিআরসি বা এনআইডি নম্বর দিতে হবে যা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখানে আবেদনকারীর পেশা, ব্যক্তিগত বিবরণ এবং নাগরিকত্বের তথ্যের রূপরেখা দিতে হবে।

ঠিকানা

এই বিভাগটি স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানার মধ্যে বিভক্ত। স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম, জেলা, থানা এবং অন্যান্য সম্প্রদায় হিসেবে  বিভক্ত। প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে পোস্ট অফিস নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন করা হয়। যদি আবেদনকারীর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হয়, তবে কেবল ‌স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা ‘একই’ হিসাবে চিহ্নিত বাক্সটি চেক করতে হবে। যদি না হয়, তাহলে পৃথকভাবে বর্তমান ঠিকানাটিও ইনপুট করতে হবে।

আইডি তথ্য

পরবর্তী ধাপে পরিচয়পত্রের তথ্য দিতে হবে। প্রথমে, নির্বাচন করতে হবে আগের কোনো এমআরপি/হস্তলিখিত পাসপোর্ট আছে কি না। যেহেতু এটি পুনর্নবায়ন। তাই ‘আমার একটি বিদ্যমান এমআরপি আছে’ বিকল্পটি নির্বাচন করতে হবে। বিকল্পটি নির্বাচন করার পর পাসপোর্ট অনুরোধের কারণ নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে, এটি হয় ‘মেয়াদ শেষ’ বা ‘ই-পাসপোর্টে রূপান্তর’ হবে। এর পর বিদ্যমান/মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের বিবরণ ইনপুট করতে হবে। এছাড়াও এখানে এনআইডি/বিআরসি নম্বর ইনপুট করতে হবে।

পিতা-মাতার তথ্য

পরবর্তী পৃষ্ঠায় পিতা-মাতার তথ্য পূরণ করতে বলা হবে। এখানে বাবা এবং মায়ের নাম ইনপুট করতে হবে। তাদের পেশা এবং
এনআইডি/বিআরসি নম্বরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পিতা-মাতার অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে, একইভাবে একটি পৃথক বাক্সে একজন আইনি অভিভাবকের বিবরণ ইনপুট করতে হবে।

দাম্পত্যের তথ্য

পিতা-মাতার তথ্যের পর স্বামী/স্ত্রীর তথ্য পূরণ করতে বলা হবে। যদি আবেদনকারী অবিবাহিত নির্বাচন করেন, তবে সমস্ত বিকল্প ফাঁকা হয়ে যাবে এবং পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতে সক্ষম হবেন তিনি। আর যদি বিবাহিত হন, তাহলে পিতামাতার মতো স্ত্রী/স্বামীর বিবরণ পূরণ করতে হবে।

জরুরি যোগাযোগ

আবেদনপত্রে একটি জরুরি যোগাযোগও ইনপুট করতে হবে। প্রথমে জরুরি প্রয়োজনে পাওয়া যায় এমন পরিচিতর সঙ্গে সম্পর্ক নির্বাচন করতে হবে। এরপর তাদের ব্যক্তিগত ও ঠিকানার বিবরণের পাশাপাশি যোগাযোগের তথ্য বিস্তারিতভাবে ইনপুট করতে হবে।

পাসপোর্ট পাতা

এরপর আবেদনকারী পাসপোর্টে যে সংখ্যাটি চান, তা নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে দুটি বিকল্প রয়েছে, ৪৮ পৃষ্ঠা বা ৬৪ পৃষ্ঠা। পাসপোর্টের জন্য ৫ থেকে ১০ বছরের বৈধতার সময়কাল নির্বাচন করতে হবে।

এখানে বিভিন্ন ডেলিভারি টাইমফ্রেমে উভয় অপশনের ফি কাঠামো রয়েছে।

বাংলাদেশ পাসপোর্ট নবায়ন ফি প্রদান

ই-পাসপোর্ট ওয়েব পোর্টালের ফি-গুলোর জন্য অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে বর্তমানে উপলব্ধ নেই। ফলে বাংলাদেশ থেকে একটি আবেদনের ক্ষেত্রে অফলাইন অর্থপ্রদানের জন্য বেছে নিতে হবে।

ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা যাবে। চাইলে ই-চালানের মাধ্যমেও ফি পরিশোধ করা যাবে।

অফলাইন পদক্ষেপ

যেহেতু পাসপোর্ট পুনরায় নবায়ন করার প্রক্রিয়া একটি হাইব্রিড, তাই বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। অনলাইন আবেদনটি সম্পূর্ণ করার পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করতে বলা হবে। ভিড়ের ওপর নির্ভর করে, এটি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক কার্যদিবস হতে পারে।

এরপর ড্যাশবোর্ড থেকে অনলাইন আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করতে হবে। একটি পিডিএফ ফাইলও দেখা যাবে, যেখানে প্রয়োজনীয় নথিগুলোর রূপরেখা রয়েছে। যা অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় আনতে হবে।

এর মধ্যে রয়েছে-

মুদ্রিত আবেদনের সারাংশ এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডকুমেন্ট
-টাকা প্রদানের রশিদ
-পরিচয় নথি
-সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য জিও/এনওসি
– অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি

বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর নির্বাচিত ডেলিভারি বিকল্প অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত হবে।

চূড়ান্ত শব্দ

পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া হাতে লেখার দিন থেকে অনেক সহজ হয়েছে। একটি হাইব্রিড অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমের সাহায্যে, আবেদনকারীরা বেশিরভাগ প্রক্রিয়াটি তাদের ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারে। এটি কেবল দক্ষতা বাড়ায় না, তবে সাধারণ জনগণের জন্য আমলাতান্ত্রিক দুঃস্বপ্নও হ্রাস করে।